Sunday, November 30, 2014

শিশুর শ্বাসকষ্ট ও বয়স্কদের হাঁপানি


যে কোনো শিশু হঠাৎ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো শিশুর শ্বাসে বাঁশির শব্দ (হুইজিং) শুনে হঠাৎ অনেকে ভয় পেতে পারেন। শিশুর নিঃশ্বাসে হুইজিং মানে অ্যাজমা নয়। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের শ্বাসনালীর প্রদাহ অ্যাবং সংকোচন হয় সাধারণত ভাইরাস আক্রমণে। ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালীর অন্য লক্ষণসমূহ যেমন কাঁশি, কফ, গলাব্যথা বারবার দেখা দেয়। বারবার শ্বাসনালীর প্রদাহ অ্যাবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধার অন্যান্য কারণ যেমন শ্বাসনালীতে কোনো বস্তু আটকে যাওয়া, শ্বাসনালীর স্থায়ী সংকোচন, টিউমার ইত্যাদি বিষয়কে যদি রোগের বৃত্তান্ত অ্যাবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া যায় তবে সে ক্ষেত্রে হুইজিংকে অ্যাজমার অন্যতম লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। দেখা যায় বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেকের এটা কমে আসে সেহেতু হুইজিং হলেই অ্যাজমা নিরূপণ করা নিতান্তই অবিবেচকের পরিচয় দেওয়া হবে। এ অবিবেচনায় শিশুর ভুল রোগ নিরূপণ, ভুল চিকিৎসা বা অর্যাপ্ত চিকিৎসা শ্বাসনালীর অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ : সাধারণত শিশুদের শ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ হলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। শিশুদের রোগের পরিপূর্ণ বৃত্তান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অ্যাজমার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য লক্ষণকে বাদ দেওয়া যায়। দেখা যায় যদি কারণগুলো সঠিক পরীক্ষা, অ্যালার্জি টেস্ট ও ফুসফুলের কার্যকরী ক্ষমতা পরীক্ষা করে অ্যালার্জির ওষুধ ও ভ্যাকসিন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হলে কর্টিকোস্টেরয়েডের ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। এর ফলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল প্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। আমাদের মতো উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতি অ্যালার্জিজনিত রোগের চিকিৎসা বলে অভিহিত করেছেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার চিকিৎসা পদ্ধতি। অনেকের ধারণা ছিল অ্যালার্জিজনিত রোগ একবার হলে আর সারে না। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসা ব্যবহার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। অ্যালার্জিজনিত রোগ প্রথম দিকে ধরা পড়লে একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
বয়স্ক মানুষের হাঁপানি : হাঁপানি নির্দিষ্ট বয়সের কোনো রোগ নয়। যে কোনো বয়সের মানুষই হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারে। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের হাঁপানি বিভিন্নভাবে আত্দপ্রকাশ করে থাকে। হঠাৎ শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও কাশি, প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে হঠাৎ শ্বাসকষ্টের আক্রমণ এবং বৃদ্ধদের মাঝে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও সামান্য পরিশ্রমে, হাঁপিয়ে পড়ার লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। বয়স্কদের
মাঝে এ ঘটনার কারণ হলো ক্রনিক ব্রুংকাইটিস ও অ্যামপাইসিমা। প্রাপ্তবয়স্করা হাঁপানি আক্রমণের মধ্যবর্তী সময়ে স্বাভাবিক আর বৃদ্ধরা হাঁপানি রোগী আক্রমণ ছাড়াও দিনের বেশির ভাগ সময়ই শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা পান না। হাঁপানি বৃদ্ধ বয়সে স্বাভাবিক কারণে এটি আলাদা অর্থ বহন করে থাকে। হাঁপানি উন্নত দেশের বয়স্ক মানুষের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। আমরা দেখতে পাই, হাঁপানি একটি প্রচলিত রোগ কিন্তু বয়স্কদের ওপর হাঁপানির প্রকোপ সমীক্ষা নেই।
বললেই হয়। বৃদ্ধ বয়সে হাঁপানিতে যারা কষ্ট পান তাদের চিকিৎসা সাবধানে করতে হয়।



অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন
লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষ্যব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা।


- See more at: http://eurobdnews.com/health-news-of-bangladesh/2014/11/30/87973#sthash.uLEmJYjC.dpuf

No comments:

Post a Comment

Thanks