আরাদিয়াকে ডাইনি
পরিচয়ে
ইতিহাসের পাতায়
স্থান
দেওয়া
হলেও
তার
আসল
পরিচয়
নিয়ে
বিস্তর
তর্ক-বিতর্ক রয়েছে আজও। বিশেষ
করে
চার্লস
লেইল্যান্ড যিনি
একজন
লোকসাহিত্য বিশারদ
তার
গ্রন্থে আরাদিয়াকে উপস্থাপনের মাধ্যমে তার
অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জায়গা
তৈরি
করেন। তার
বইটি
১৮৯৯
সালে
ইতালীয়
ভাষায়
প্রকাশ
হয়েছিল। বইটি
মূলত
ডাইনিদের বেনগিলো বা
গসপেলের অনুবাদ। সে
অর্থে
আরাদিয়াকে প্রাচীনকালের ডাইনি
সম্প্রদায়ের কালো
জাদুকরদের একজন
দেবী
হিসেবে
উপস্থাপন করা
হতে
পারে
বলে
ধারণা
করা
হয়। এই
যুক্তিটা আরও
শক্ত
হয়
রোমান
সভ্যতার পতনের
সময়। আরাদিয়ার প্রকাশক চার্লস
লেইল্যান্ড ১৮৯০
সাল
থেকে
ফ্লোরেন্স শহরে
লোকসাহিত্য নিয়ে
গবেষণা
শুরু
করেন। এই
সময়
ম্যাডালিনা নামের
একজন
রমণী
তাকে
এই
সম্প্রদায়ের একটি
লিখিত
পবিত্র
গ্রন্থের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত করেন। সে
গ্রন্থের ওপর
ভিত্তি
করেই
আরাদিয়াকে তুলে
আনা
হয়। কিন্তু
জেনে
রাখা
ভালো,
ম্যাডালিনা নিজেই
একজন
ডাইনি
ছিলেন
যিনি
তাস
দেখে
ভবিষ্যৎ বলতে
পারতেন। তিনি
কি
কোনোভাবে ধোঁকা
দিয়েছেন? হয়তো
উত্তরটা, না।
কারণ
আরাদিয়া ছাড়াও
১৮৮৬
সালে
পরিচয়ের পর
থেকে
ম্যাডালিনা যত
ইতালীয়
লোকসাহিত্য উপাদান
লেইল্যান্ডকে সংগ্রহ
করে
দিয়েছিলেন তার
সবটা
অগ্রাহ্য করা
যায়
না।
আরাদিয়া ছাড়াও
ম্যাডালিনার কাছ
থেকে
পাওয়া
দলিলগুলো থেকে
জানা
যায়
সৃষ্টিতত্ত্ব, ডায়ানা
ও
লুসিফারের কথা,
তখনকার
পৃথিবীর অবস্থা,
আরাদিয়ার জন্ম,
তাকে
পৃথিবীতে প্রেরণ,
ডাকিনীবিদ্যার বিভিন্ন মন্ত্র
ও
কৌশল,
ডাইনিদের উপাসনার পদ্ধতি,
প্রচলিত ধর্মগুলোর সঙ্গে
বিরোধ
ইত্যাদি। এ
ছাড়া
ইতালিয়ান কিছু
লোকগল্প গসপেলের শেষে
যুক্ত
করা
হয়েছে
সেগুলো
হলো,
বাতাসের ঘর,
চন্দ্রের দেবী
তানা,
তানা
আর
এডমন্ডের কাহিনী,
ম্যাডোনা, জিলানা
আর
ইয়ানার
কাহিনী,
ডায়ানার সন্তানদের কাহিনী,
মার্কারি ও
ডায়ানার বার্তাবাহীর কাহিনী
ইত্যাদি। আরাদিয়াকে নিয়ে
সংশয়ের
শেষ
হয়
তখনকার
পৃথিবীর অবস্থা
সম্পর্কে বর্ণনার সময়।
দলিলগুলো সাক্ষ্য দেয়,
সে
সময়
পৃথিবীতে প্রচুর
ধনী
লোক
ছিল।
ধনী
লোকেরা
একপর্যায়ে গরিবদের নিজেদের দাসে
পরিণত
করে
ফেলে
যার
ফলে
ভয়াবহ
রকমের
শ্রেণিবৈষম্যের উদ্ভব
ঘটে।
অত্যাচারের মুখে
দাসেরা
একপর্যায়ে পালাতে
শুরু
করে।
এদের
একটি
দল
দাসত্ব
থেকে
বাঁচতে
পাহাড়
ও
অরণ্যে
আশ্রয়
নেয়
এবং
জীবনের
তাগিদে
চুরি
ডাকাতি
আরম্ভ
করে।
এই
দুর্যোগতুল্য পরিস্থিতিইে চন্দ্রদেবী ডায়ানা
তার
কন্যা
আরাদিয়াকে পৃথিবীতে প্রেরণ
করে।
ডায়ানা
পৃথিবীর সামগ্রিক প্রতিকূলতা জয়
করার
জন্য
আরাদিয়াকে জাদুবিদ্যায় পারদর্শী করে
পাঠায়।
এ
কারণেই
আরাদিয়াকে ডাইনি
বলে
অভিহিত
করেছেন
অনেক
ইতিহাসবেত্তা। তবে
ডাকিনীবিদ্যা ছাড়াও
আরাদিয়ার আরও
দক্ষতা
ও
ঈশ্বরিক ক্ষমতার উদাহরণ
পাওয়া
যায়।
পৃথিবীতে প্রেরণের আগে
আরাদিয়াকে ডায়ানা
১২টি
ক্ষমতা
প্রদান
করেন।
প্রেমের সফলতা
এনে
দেওয়া,
ভালো
এবং
মন্দ
দুই
ধরনের
মন্ত্রই ব্যবহার করা,
অশরীরী
আত্দার
সঙ্গে
যোগাযোগের ক্ষমতা,
সেই
সব
মৃত
যাজকের
সঙ্গে
যোগাযোগের ক্ষমতা
যারা
কোনো
রহস্যের ব্যাপারে অবগত,
ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতা
থেকে
গুপ্তধন খুঁজে
বের
করা,
বাতাসের কথা
বুঝতে
পারা,
পানিকে
মদে
পরিণত
করা,
তাস
দেখে
ভাগ্য
গণনা
করা,
রোগ
থেকে
আরোগ্য
লাভ
করা,
কুৎসিত
চেহারাকে সুন্দর
করা,
হাতের
রেখা
দেখে
ভাগ্য
গণনা
করা,
আর
বন্যপ্রাণীকে বশে
আনা।
কবি
ভিভিয়ার ক্রলওয়ে তার
'চার্জ
অব
আরাদিয়া'তে
আরাদিয়ার পরিচয়
তুলে
ধরে
তার
ক্ষমতার পরিচয়
তুলে
ধরেন।
সেখানে
বলা
হয়,
আরাদিয়া সমুদ্র
ও
বাতাসের কন্যা।
চাঁদ
ও
সূর্যের কন্যা।
সূর্যোদয় ও
সূর্যাস্তের কন্যা।
দিন
ও
রাতের
কন্যা।
আরাদিয়া এসব
ক্ষমতার যোগ্য
ছিল
কিনা
তার
প্রমাণস্বরূপ কালো
জাদু
ব্যবহারের কথা
বলা
হয়ে
থাকে।
সে
যাই
হোক।
আরাদিয়া পৃথিবীর দরিদ্র
ও
নিষ্পেষিত মানুষের পাশে
দাঁড়ানোর জন্যই
ডায়ানার পছন্দের কন্যা
ছিলেন।
যেসব
দাস
দরিদ্র
ও
শোষিত
ছিল
তারা
সবাই
পলাতক
ছিল
পাহাড়ে
ও
অরণ্যে। আরাদিয়ার প্রথম
দায়িত্ব ছিল
সেসব
পলাতক
দাসদের
শিক্ষা
দেওয়া
তারা
যেন
তাদের
অত্যাচারী মনিবদের তাদের
প্রাসাদের ভিতরেই
হত্যা
করে।
আরাদিয়াকে প্রেরণের পর
তিনি
একদিকে
ডাইনি
হিসেবে
কুখ্যাতি লাভ
করেন
অন্যদিকে দেবী
হিসেবে
নিজেকে
উপস্থাপন করেন
শোষিত
দাসদের
কাছে।
বিতর্ক
রয়েছে
আরাদিয়াকে পৃথিবীতে নগ্নভাবে প্রেরণের মাধ্যমে নগ্নতার উপাসনার মাত্রা
যোগ
হয়।
গসপেল
বা
লৌকিক
লোকগাথা অনুযায়ী যতদিন
পর্যন্ত পৃথিবী
থেকে
সব
অত্যাচারী মনিবদের পতন
না
ঘটবে
ততদিন
আরাদিয়া নগ্নভাবেই পূজিত
হবে
এবং
অনুসারীরা নগ্নভাবেই এই
পূজার
আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে।
এতে
করে
ক্যাথলিকদের সঙ্গে
আরাদিয়ার তিক্ত
সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে।
যে
কারণে
তার
ডাকিনীবিদ্যার প্রভাব
উপেক্ষিত হয়ে
ডাকিনী
মতবাদের প্রতিষ্ঠা লাভ
হয়।
আরাদিয়া যে
শুধু
প্রাচীনকালের প্রচলিত অন্য
ধর্মগুলোর সঙ্গে
বিরোধে
লিপ্ত
হয়ে
বিতর্কের জন্ম
দিয়েছে
তা
নয়,
বরং
১৮৯৯
সালে
এই
গ্রন্থটি প্রকাশের পরও
একইভাবে সাহিত্যবোদ্ধাদের মাঝে
এর
বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে
নতুন
করে
বিতর্কের জন্ম
দেয়।
ম্যাডালিনা ও
আরাদিয়ার অনুসারীদের নিয়ে
তীব্র
সমালোচনা শুরু
হলে
আরাদিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে
প্রশ্ন
ওঠে।
এমনকি
তার
অনুসারীদের অস্তিত্ব খুঁজে
না
পাওয়ার
কথাও
বলে
বসেন
অনেকে।
ফলে
আরাদিয়া কে
ছিলেন-
সে
নিয়ে
রহস্যের সৃষ্টি
হয়।
যদিও
ইতালীয়
লোকসাহিত্যে আরাদিয়াকে স্থান
দেওয়া
হয়েছে,
কিন্তু
প্রকৃত
আরাদিয়া কে
ছিলেন
সে
নিয়ে
গবেষণা
শুরু
হয়।
আরাদিয়াকে সমগ্র
ইউরোপের রহস্য
রমণী
হিসেবে
গণ্য
করা
হয়।
তার
পরিচয়
পাওয়ার
জন্য
ইতিহাস
ঘাঁটতে
শুরু
করা
হয়।
কিন্তু
ইনকুইজিশনের ইতিহাস
হাজার
হাজার
ডাইনিকে পুড়িয়ে
মারার
সাক্ষ্য দিলেও
এই
ডাকিনীবিদ্যা নির্ভর
একটি
ধর্মগ্রন্থ আছে,
তা
নিয়ে
সন্দেহ
রইল
না।
একপর্যায়ে ধরা
হয়,
আরাদিয়া নামটি
উচ্চারণে বিকৃতি
হয়েছে।
অনেকের
মতে,
ইউরোপের ইতিহাসের আলোচিত
চরিত্র
রানী
হেরোদিয়াস-ই
আসলে
এই
কথিত
ডাইনিদের গুরু
আরাদিয়া। বিশেষ
করে
ইতালিতে হেরোদিয়াস পরিচিত
ছিলেন
এরোদিয়াদের নামে।
যা
উচ্চারণের দিকে
আরাদিয়ার খুব
কাছাকাছি।
এ
ছাড়া
ভেরেনার বিশপ
এই
ব্যাপারে এক
জায়গায়
লিখেছেন, 'অনেকেই
বিশ্বাস করে
রানী
হেরোদিয়াস আসলে
একজন
দেবী,
পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ যার অধিকারে আছে।'
তারপর
যোগ
হয়
সেসব
নারীদের নিয়ে
তর্ক,
যারা
রাতের
বেলায়
বের
হয়ে
ডাকিনীবিদ্যা চর্চা
করতেন।
আরাদিয়া ডাইনি
হলে
কালো
জাদুতে
সিদ্ধহস্ত হবেন।
সে
বিবেচনায় রানী
হেরোদিয়াসকে আরাদিয়ার চরিত্রে নামান্তর করা
হয়ে
থাকতে
পারে।
এ
ছাড়াও
আরাদিয়ার মা
হিসেবে
দেবী
ডায়ানার যে
বর্ণনা
পাওয়া
যায়
তাতে
রোমান
দেবী
সেলেনি
আর
হেকাতের সঙ্গে
বেশ
মিল
পাওয়া
যায়।
এদের
তিনজনই
রাতের
অন্ধকারে আবির্ভূত হতেন
এবং
ডায়ানার মতোই
অনুসারীদের মাঝে
ডাকিনীবিদ্যার প্রসার
ঘটাতেন। যা
আরাদিয়ার পৃথিবীতে প্রেরণের সঙ্গে
খুবই
সঙ্গতভাবে মিলে
যায়।
হতে
পারে
হেরোদিয়াসই ডাইনি
আরাদিয়া।
ডাকিনীবিদ্যায় আরাদিয়ার পদ্ধতি
অনুসরণকারী একটি
গোষ্ঠী
যে
বিভিন্ন কালো
জাদু
চর্চা
করত
সে
নিয়ে
আর
সংশয়
রইল
না
যখন
আরাদিয়া ইতালীয়
লোকগাথায় নিজের
অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে
সমর্থ
হয়।
আরাদিয়ার অনুসারীরা লোকালয়ের বাইরে
পাহাড়ের গুহা
বা
গহিন
জঙ্গলের ভিতর
তাঁবু
খাটিয়ে
বাস
করত।
অনেকে
আবার
দীক্ষা
শেষ
করে
লোকালয়ে এসে
বিয়ে
করে
স্বাভাবিক জীবনযাপন করত।
তবে
প্রশ্ন
এখনো
রয়েছে
ইতিহাসবিদদের কাছে,
আরাদিয়া হয়তো
বা
প্যাগান পূর্ব
ভেষজ
ঔষধবিদ্যা, প্রাচীন লোককাহিনী আর
ডাইনিদের পুরনো
দেব-দেবীদের গল্পচরিত্রের একজন। আবার অনেক
গবেষক
আরাদিয়াকে পৃথক
নারী
হিসেবে
দেখেছেন। তার
সত্যিকারের পরিচয়
নিয়ে
বিতর্কের কারণে
তাকে
নিয়ে
নানা
রোমাঞ্চকর গল্প
মুখে
মুখে
ছড়ানো
হয়েছে।
এ
কারণেই
কেউ
কেউ
তাকে
দেখেছে
নগ্ন
উপাসনার দেবী
হিসেবে,
কেউ
দেখেছেন শোষিত
দাসদের
মুক্তিদানকারী জাদুকর
হিসেবে। কেউ
কেউ
তাকে
ইতিহাসের পাতায়
ঠাঁই
দিতে
চেয়েছেন ডাইনি
হিসেবে। তবে
সে
যাই
হোক
না
কেন,
ইতালীয়
লোকসাহিত্যে তার
প্রভাব
অপরিসীম। ডাকিনীবিদ্যার গুরু
হিসেবে
এ
রকম
একজন
নারী
মধ্যযুগে ইতালিতে আবিভর্ূত হয়েছিলেন এটা
সত্য।
অনুসারীদের দাবি
অনুযায়ী ১৩
আগস্ট
১৩১৩
সালে
ইতালির
ভোল্টেরা শহরে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই
রহস্য
রমণী।
তার
পরিবার
সেখানে
খুব
বেশিদিন থাকেনি। সেখান
থেকে
তারা
সরে
আসেন
আলবান
পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী নেমি
শহরে।
জীবনের
কোনো
একটা
পর্যায়ে তিনি
আধ্যাত্দিকতার সন্ধান
পান
এবং
অনুসারীদের নির্জনে ডাকিনীবিদ্যার দীক্ষা
দিতে
শুরু
করেন।
একপর্যায়ে দীক্ষা
শেষে
অনুসারীদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করান
কিছু
জ্ঞানবাণী দিয়ে।
তারপর
আরাদিয়া অজ্ঞাত
গন্তব্যে রওনা
হন।
অনেকের
ধারণা,
আরাদিয়া পূর্বদিকের দেশগুলোতে আশ্রয়
নিয়েছিলেন।
কিন্তু
তার
প্রস্থানের পর
চিত্র
বদলে
যায়।
কালো
জাদু
চর্চাকারীদের সমাজ
ও
নগররাষ্ট্র থেকে
মুছে
দেওয়ার
জন্য
তার
অনুসারীদের হত্যা
করা
শুরু
হয়।
একপর্যায়ে মৃত্যুর হাত
থেকে
বাঁচতে
কিছু
অনুসারী পালিয়ে
যেতে
সক্ষম
হলেও
বেশির
ভাগই
প্রাণ
হারায়।
এর
পেছনের
পটভূমি
ছিল
দ্বাদশ
শতাব্দীতে কিছু
তান্ত্রিকের অশুভ
কর্মকাণ্ড। তাদের
নিয়ে
শঙ্কা
করা
হতো
তারা
মানুষের রক্তপান করে,
অশুভ
আত্দা
হয়ে
ঘুরে
বেড়ায়।
কিন্তু
আরাদিয়ার অনুসারী যাদের
ডাকা
হয়
'জানা'
তারা
কিন্তু
পাহাড়ে,
গুহায়
গিয়ে
আশ্রয়
নিয়েছিল তারা
এসব
বর্জন
করে।
অন্যদিকে আরাদিয়া হয়ে
থাকে
চির
রহস্যময়ী এক
রমণী।